ফসল গিয়েছে পেকে, দিনান্ত আপন চিহ্ন দিল তারে পাণ্ডূর আভায়। আলোকের ঊর্ধ্বসভা হতে আসন পড়িছে নুয়ে ভূতলের পানে। যে মাটির উদ্বোধন বাণী জাগায়েছে তারে একদিন, শোনো আজি তাহারই আহ্বান আসন্ন রাত্রির অন্ধকারে। সে মাটির কোল হতে যে দান নিয়েছে এতকাল তার চেয়ে বেশি প্রাণ কোথাও কি হবে ফিরে দেওয়া কোনো নব জন্মদিনে নব সূর্যোদয়ে!
আমি যে বেশ সুখে আছি অন্তত নই দুঃখে কৃশ, সে কথাটা পদ্যে লিখতে লাগে একটু বিসদৃশ। সেই কারণে গভীর ভাবে খুঁজে খুঁজে গভীর চিতে বেরিয়ে পড়ে গভীর ব্যথা স্মৃতি কিম্বা বিস্মৃতিতে। কিন্তু সেটা এত সুদূর এতই সেটা অধিক গভীর আছে কি না আছে তাহার প্রমাণ দিতে হয় না কবির। মুখের হাসি থাকে মুখে, দেহের পুষ্টি পোষে দেহ, প্রাণের ব্যথা কোথায় থাকে জানে না সেই খবর কেহ। কাব্য প'ড়ে যেমন ভাব কবি তেমন নয় গো। আঁধার ক'রে রাখে নি মুখ, দিবারাত্র ভাঙছে না বুক, গভীর দুঃখ ইত্যাদি সব হাস্যমুখেই বয় গো। ভালোবাসে ভদ্রসভায় ভদ্র পোশাক পরতে অঙ্গে, ভালোবাসে ফুল্ল মুখে কইতে কথা লোকের সঙ্গে। বন্ধু যখন ঠাট্টা করে মরে না সে অর্থ খুঁজে, ঠিক যে কোথায় হাসতে হবে একেক সময় দিব্যি বুঝে। সামনে যখন অন্ন থাকে থাকে না সে অন্যমনে, সন্গীদলের সাড়া পেলে রয় না বসে ঘরের কোণে। বন্ধুরা কয় "লোকটা রসিক', কয় কি তারা মিথ্যামিথ্যি? শত্রুরা কয় "লোকটা হাল্কা', কিছু কি তার নাইকো ভিত্তি? কাব্য দেখে যেমন ভাব কবি তেমন নয় গো। চাঁদের পানে চক্ষু তুলে রয় না পড়ে নদীর কূলে, গভীর দুঃখ ইত্যাদি সব মনের সুখেই বয় গো। সুখে আছি লিখতে গেলে লোকে বলে,"প্রাণটা ক্ষুদ্র! আশাটা এর নয়কো বিরাট, পিপাসা এর নয়কো রুদ্র।' পাঠকদলে তুচ্ছ করে, অনেক কথা বলে কঠোর-- বলে,"একটু হেসে-খেলেই ভরে যায় এর মনের জঠর।' কবিরে তাই ছন্দে বন্ধে বানাতে হয় দুখের দলিল। মিথ্যা যদি হয় সে তবু ফেলো পাঠক চোখের সলিল। তাহার পরে আশিস কোরো রুদ্ধকণ্ঠে ক্ষুব্ধবুকে, কবি যেন আজন্মকাল দুখের কাব্য লেখেন সুখে। কাব্য যেমন কবি যেন তেমন নাহি হয় গো। বুদ্ধি যেন একটু থাকে, স্নানাহারের নিয়ম রাখে, সহজ লোকের মতোই যেন সরল গদ্য কয় গো।